Skip to content

Success Stories

ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুরি দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে মমিনুর…..

মোঃ মমিনুর রহমান, নিলফামারীর ডিমলা উপজেলার এক অতিসাধারণ পরিবারে জন্ম তার৷ বাবার এক চিলতে ফসলি জমি তো দূরের কথা নেই মাথা গোজার ঠাই৷ তাই বাধ্য হয়ে মামার বাড়িতে ছোট একটি কুঁেড় ঘরে তাদের বসবাস৷ মমিনুরের বাবা গ্রামে ভ্যান চালায়, এমন কি মমিনুর ও এস.এস. সি পর্যনত্ম তার বাবার সাথে ভ্যান চালিয়েছে৷ উচ্চ শিক্ষা কি জিনিস তা তার পরিবারের কেউ বুঝেনা৷ বৃদ্ধ বাবার ভ্যান চালানো আয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মমিনুরের জন্য ছিল এক স্বপ্ন৷ এস.এস. সি পার হতে পারবে কি না এই শঙ্কা ছিল মমিনুরের৷ মমিনুরের বাড়ির লোকজন এমন কি আশে পাশেও শিক্ষার আলো নেই বললেই চলে৷ তাই মমিনুরের লেখা পড়ার প্রতি কারো আগ্রহ ছিলনা৷ লজিং থেকে, ভ্যান চালিয়ে, অন্যের জমিতে দিন মজুরি করেও নিজে পড়া থেকে দুরে সরে যায়নি; মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে এবং নিজে কাজ করে যা পেত তা দিয়ে এসএসসি ফরম ফিলাপ করে৷ এসএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেয়ে অত্র এলাকায় আলোচনায় কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠে সে৷

এইচএসসিতেও গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়৷ স্কুল শিক্ষকদের সহায়তায় “রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে” ভর্তি হয় সে৷ভর্তির টাকা যোগাড় করতে মমিনুরের মা বর্গা পালিত একটি ছাগল বিক্রি করে এবং বাজারের দোকান থেকে চাঁদা উঠিয়ে “ভর্তি ফি” যুগিয়েছে তার গ্রামের লোকজন৷ এখনো কিনতে পারেনি বই-খাতা; একটি প্যান্ট, পুরাতন দুটি শার্ট, আর একজোড়া সেন্ডেলই তার ভরসা৷ ভর্তির পর একসহপাঠির দয়ায় তার মেসে থাকার সুযোগ হয়৷ কিন্তু খাবার টাকা দিতে না পেরে নিদারম্নণ কষ্টে কাটে মমিনুরের দিন৷ বাড়িতে তার বাবা-মাও বহু কষ্টে চলছে; দুঃখে-কষ্টে, ৰুধার যন্ত্রণায় দিশেহারা মমিনুর কাউকে না বলে একদিন মেস থেকে পালিয়ে গ্রামে চলে আসে৷ বন্ধ হয়ে যায় তার উচ্চ শিক্ষা৷ হঠাত্‍ একদিন তার স্কুল শিক্ষক তার বাবার কাছে মমিনুর সমর্্পকে খোঁজ খবর জানতে চাইলে বাবা কেঁদে কেঁদে কথা গুলি বলেন৷

সেই শিক্ষকের সহয়তায় আবার চলে আসে মেসে, কিছু দিন যাওয়ার পর সে দেখে মেসের সহপাঠিরা প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বৃত্তির ফরম পূরণ করছে৷ মমিনুরও তাদের কাছ থেকে একটি ফরম নিয়ে পূরণ করে জমা দেয়৷ আশে পাশে কেউ বৃত্তি না পেলেও মমিনুেরর দিকে মহান আলস্নাহ মূখ তুলে তাকায়৷ বৃত্তি পাওয়ার সুবাদে এখন লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে মমিনুর৷

ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুরি দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে মমিনুর…..

পঞ্চগড়ের কহুর হাটের উত্তর খাল পাড় গ্রামের হত দরিদ্র দিন মজুর আব্দুর রশিদের জ্যেষ্ঠ পুত্র বাদশা আলম; দুই বোন, বাবা মা ও দাদিসহ ছয় সদস্যের পরিবার৷ দশ শতাংশ কৃষি জমি আর এক চালা খড়ের বেড়ার এক রম্নমের একটি বসত ঘর আছে তাদের৷ গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে ঋন নিতে নিতে সামান্য কৃষি জমিটুকুও বন্ধক দেয়া৷ অন্যের জমিতে দিন মজুরি দিয়ে যা পায় তাতে চলছে তাদের পরিবার৷ প্রাথমিক স্কুল থেকে বাদশা আলম ছিল অত্যনত্ম মেধাবী৷

তার মা ও দাদি স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন৷ বাবা নিরক্ষর হলেও ছেলে যে অত্যনত্ম মেধাবী তা উপলব্ধি করতে পারত৷ বাবার কাজের প্রচন্ড চাপ দেখে বাদশা নিজে থেকেই বাবার সাথে কাজে যেতে লাগল৷ কয়েকদিন বাবার সাথে দিন রাত কাজ করে অসুস্থ হয়ে পরে সে৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক খবর পেয়ে বাদশার বাড়িতে ছুটে গেল৷ তার বাবাকে বলে বুঝিয়ে একরকম জোর পূর্বক বাদশাকে স্কুলে নিয়ে আসে ৷ স্কুল শিক্ষকের সেই অবদান আজও গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করে বাদশার পরিবার৷

চাকলাহাঠ কে.পি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে প্রথম বারের মত গোল্ডেন এ+ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে সে৷ নিতানত্মই হত দরিদ্র পরিবার, শুধু মেধার জোর আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বলে ভর্তি হয় পঞ্চগড় এম. আর. সরকারি কলেজে৷ এইচএসসিতেও গোল্ডেন এ+ পেয়ে কহুরহাটের কৃতি সনত্মানে পরিনত হয় বাদশা৷বাদশার এই অসাধারণ মেধা দেখে শেষ সম্বল পাঁচ শতাংশ জমি বন্ধক দিয়ে বাদশাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেন উচ্চ শিক্ষার জন্য৷ অদম্য মেধাবী এই ছাত্র অবশেষে জায়গা করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে৷

বাদশার জীবনে অর্থনৈতিক কারণে, লেখা পড়ার বাধা সমর্্পকে জানতে চাইলে বাদশা বলেন, আমাদের পরিবারে নুন আনতে পানত্মা ফুরায়; বাবার ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমাকে পড়াতে পারে নাই৷ মা আর সেই শিক্ষকের সহযোগিতায়ই আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যনত্ম এসেছি৷ এই শিক্ষকের অবদান আমার হৃদয় থেকে কখনো মুছবেনা৷ জীবনের প্রতি মূহুর্ত কেটেছে আমাদের অভাব অনটনে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও টিউশনি না পেয়ে হতাশ হয়ে গিয়ে ছিলাম৷ পঞ্চগড়ের এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় ফজলুল হক মুসলিম হলের গণরম্নমে ফো্লরিং করার সুযোগ পেলেও প্রায় একবেলা খেয়ে কাটাতে হয়েছে আমাকে৷

হঠাত্‍ একদিন বিভাগের নোটিশ বোর্ডে ছাত্রদের ভিড় দেখে আমিও এগিয়ে যাই৷ প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বৃত্তির বিজ্ঞাপনটি সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে৷ জীবনে অনেক অভাব দেখেছি কখনো চোখে জল আসেনি৷ বিজ্ঞাপনটি পড়ে আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি, আবেদন করি যথাযথ নিয়মে, অত্যনত্ম মনোযোগের সহিত৷ বৃত্তি পূর্ব সাৰাত্‍কারের সময় কান্নার জন্য আমি কথা বলতে পারিনা৷ অবশেষে আমি বৃত্তিটা পেলাম৷ আমি এবং আমার পরিবার পাওয়ার সুবাদে এখন লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে মমিনুর৷